দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় নানা ধরনের ‘বিভ্রান্তি’ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয় বিধায় অল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে ফল প্রকাশ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
ফল প্রকাশ উপলক্ষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বোর্ডপ্রধানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলের অনুলিপি প্রকাশ করেন। পরে তিনি ফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে পাস করা শিক্ষার্থী ও অল্প সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশের জন্য কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান। পাশাপাশি তিনি পরীক্ষার দিন কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘২ এপ্রিল থেকে শুরু আর ২৪ মে পর্যন্ত পরীক্ষা—এত দীর্ঘ সময়, যদিও রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না। কিন্তু পরীক্ষা নিতে যত বেশি সময় নিয়েছেন। সেখানে কীভাবে পরীক্ষার সময়টা কমিয়ে আনা যায়।’
‘পরীক্ষার সময়টা যদি কমিয়ে আনা যায়, তাহলে দেখবেন নানা রকম যে কথাবার্তা বলা, রিউমার ছড়ানো নানা ধরনের কথা প্রচার করা এগুলো কিন্তু কমে আসবে। কাজেই সেদিকে একটু লক্ষ রেখে…।’
প্রধানমন্ত্রী নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের তো দুই বেলা করে পরীক্ষা দিতে হত। সকালে এক পেপার, বিকেলে এক পেপার। দম ফেলার সময়ই থাকত না। সাত দিনে পরীক্ষা শেষ। ১০টা সাবজেক্ট দুই দিন গ্যাপ দিয়ে সাত দিনে শেষ।’
‘আমি মনে করি, এত লম্বা আর দীর্ঘ সময় ধরে না নিয়ে যদি একটু কমিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে পারেন, তাহলে দেখবেন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, পরীক্ষাটাও তাড়াতাড়ি হবে, নানা ধরনের কথা প্রচার-অপ্রচার তার হাত থেকেও মুক্ত হওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়, আমি বিশ্বাস করি’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়েই তার অপব্যবহার হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আমাদের সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘সরকার শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সব রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ আমরা জানি দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত করতে হলে শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার বিকল্প নেই।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে দূরে থাকে, তার জন্য শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের পুনরায় পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় জানানো হয়েছে, ১০ শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ বছর মোট পাস করেছে আট লাখ ৫৮ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন।
সারা দেশের দুই হাজার ৫৪১টি কেন্দ্রে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্রী ছয় লাখ ৮০ হাজার ৮৮৪ জন আর ছাত্র ছয় লাখ সাত হাজার ৮৭৩ জন। এর মধ্যে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড আর একটি কারিগরি ও একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।